বুঝলাম, ভাই। এবার এক ফোঁটা ইংরেজি থাকবে না।
যে শব্দের সরাসরি বাংলা নেই—তার সবচেয়ে কাছের বিকল্প ব্যবহার করেছি।
"গার্লফ্রেন্ড–বয়ফ্রেন্ড" → জীবনসঙ্গিনী / জীবনসঙ্গী
"মুভি–স্টুডিও–লিড অ্যাক্ট্রেস" → চলচ্চিত্র / নাট্যমঞ্চ / প্রধান চরিত্রাভিনেত্রী
সবকিছু সম্পূর্ণ বাংলা করা হলো—
"চলো একটা প্রতিশ্রুতি দিই। যদি সে তোমাকে 'না' বলে, তবে আমি হব তোমার জীবনসঙ্গিনী। কথা?"
রাইথা তার ছোট্ট আঙুল বাড়িয়ে দিল শ্যামের দিকে। তুলোর মতো নরম হাত, সেই হাতে এমন সরলতা—যা যে কোনো হৃদয় গলিয়ে দিতে পারে। শ্যামের মুখ লাল টকটকে, যেন লজ্জায় মাথা ফেটে যাবে। তার হঠাৎ বলা কথাগুলো শ্যামের মনে ঢেউয়ের পর ঢেউ তুলতে লাগল।
নিজেকে সামলে নিয়ে শ্যাম ধীরে বলল,
"শোনো রাইথা… তুমি আমার প্রতি যত্নশীল, এটা আমি জানি। আর তোমার অনুভূতিকে আমি সম্মান করি। কিন্তু আমি নিশ্চিত—রিতিকা আমাকে ফিরিয়ে দেবে না। তার জন্য আমি অনেক করেছি… নিশ্চয়ই বুঝবে। তবুও যদি… যদি সত্যিই 'না' বলে, তাহলে হ্যাঁ—আমি হব তোমার জীবনসঙ্গী। এতে কোনো সন্দেহ নেই।"
রাইথা হালকা হাসল, কিন্তু তার চোখে জমে উঠল চাপা ব্যথা।
ঠিক তখনই—দরজা হঠাৎ শব্দ করে খুলে গেল।
ভিতরে ঢুকল রিতিকা।
উজ্জ্বল আনন্দে ভরা মুখ, হাঁটায় উত্তেজনার দোলা।
সে বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে দু'জনের পাশে মেঝেতে বসে পড়ল।
শ্যাম একটু ধমকের মতো বলল,
"এই… রিতিকা, এভাবে হঠাৎ কারও ঘরে ঢুকে পড়া ঠিক নয়। অন্তত দরজার ঘন্টাটা বাজাতে পারতে।"
কিন্তু রিতিকা এতটাই উৎফুল্ল যে কিছুই টের পেল না।
তার চোখ চকচক করছে।
"সরি? কিন্তু তোমরা এটা অবিশ্বাস্য খবরটা শুনতেই হবে! তুমি যে চলচ্চিত্রটা আমার জন্য বানিয়েছিলে… সেটা মানুষের এত পছন্দ হয়েছে যে নাট্যজগতের এক বিখ্যাত অভিনয়শিল্পী আমাকে ডাক পাঠিয়েছেন! বলেছেন আমাকে তিনি তার পরের নাট্যচিত্রে প্রধান চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবে চান! ভাবতে পারছ? জীবনের কত বড় সুযোগ! অবশ্যই আমি রাজি হয়েছি! আর তিনি আমাকে জীবনসঙ্গিনী হতেও বলেছেন! এত বড় তারকা আমাকে চায়! আমি না বলব কেন! দারুণ না?"
তার প্রতিটি শব্দ ছিল শ্যামের বুকে ধারালো ছুরির মতো।
সে নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
তার সব ত্যাগ, সব পরিশ্রম—এক মুহূর্তে ভেঙে চুরমার।
সে শুধু নিজের স্বপ্ন পূরণ করল না… শ্যামকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গেল—একটুও ফিরে না তাকিয়ে।
তবুও শ্যাম ভেঙে পড়ল না।
চোখের জল চেপে রেখে জোর করে হাসল।
"ওহ… সত্যিই চমৎকার খবর। তোমার জন্য খুশি হলাম। অভিনন্দন। তবে… আমার একটু ব্যক্তিগত কাজ আছে, তাই এখনই তোমার আনন্দে যোগ দিতে পারব না।"
রিতিকা কিছুই বুঝল না।
সে উঠে দাঁড়াল, ব্যাগ তুলে নিল, মুখে ঝলমলে হাসি।
"ধন্যবাদ! দেখা হবে!"
এবং সে চলে গেল।
ঘরটা মুহূর্তেই ভারী হয়ে উঠল।
শ্যাম দরজার দিকে তাকিয়ে রইল—মনে পড়তে লাগল তার দেওয়া প্রতিটি সাহায্য, প্রতিটি রাতজাগা পরিশ্রম।
আর উপলব্ধি করল—তার কাছে সে কেবল একটুকু সোপান… যার ওপর পা রেখে ওপরে ওঠা যায়।
চোখ ভিজে এলে সে মনে করল—রাইথা এখনো পাশে বসে।
"তুমিও… চলে যাও, রাইথা," সে ভাঙা গলায় বলল।
কিন্তু রাইথা নড়ল না।
বরং তার মাথায় হাত রাখল, চুলে আলতো করে আদর করল।
"আমি তো বলেছিলাম, এটা হবেই," তার কণ্ঠ নরম, ব্যথায় ভরা।
"রিতিকা এখন অভিনয়জগতে… বড় স্বপ্ন, বড় মানুষ, বড় সাফল্য—সব তার দিকে আসছে। কয়েক মাস… হয়তো কয়েক বছর পর তুমি তার কাছে পুরোপুরি অপরিচিত হয়ে যাবে।"
তার কণ্ঠ কেঁপে উঠল,
"তাহলে… তুমি এখন আমার জীবনসঙ্গী হবে?"
শ্যাম তার দিকে তাকিয়ে থাকল—হাজারো আবেগে টালমাটাল।
সে উত্তর দেওয়ার আগেই—
তার ঠোঁটে এল নরম, কাঁপা, উষ্ণ স্পর্শ।
একটি চুম্বন।
রাইথার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।
চুম্বন সরিয়ে নিয়ে, সে কান্নাভেজা গলায় বলল,
"আমি তো শুধু তোমাকে চেয়েছি… সবসময়।
ও চলে গেল… এখন কি আমাকেও দূরে ঠেলে দেবে?
আমি কি এ-টুকু ভালোবাসারও যোগ্য নই?"
শ্যাম তার দিকে তাকিয়ে—মনে একটাই ভাবনা ঘুরপাক খেতে লাগল।
অবশেষে সে অতীতকে ছেড়ে দিল।
তার সামনে যে সত্যিকারের ভালোবাসা দাঁড়িয়ে আছে—
তাকে গ্রহণ করল।
এক সম্পর্ক—যা ভেঙে যায় না।
যা ছেড়ে যায় না।
যা সত্য।
Written by { dhoben }
Published by { noobBooks studio }
Published on { webnovel TMR }
Editor { raitha, leaf on books studio }
Translation { nooblate eng, nooblate bang studio & sub studio }
